Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ঝিকরগাছার ইতিহাস

প্রায় অধিকাংশ ঐতিহাসিক স্থানের নামকরণে বির্তক আছে। ঝিকরগাছার নাম করণেও এ বির্তক থেকে মুক্ত নয়। অধিকাংশের অভিমত জিংকর নামক একজন ইংরেজ এখানে নীল কুঠি স্থাপন করেছিলেন। এই নীল কুঠিকে ঘিরে একটি বাজার স্থাপিত হয়। জিংকর সাহেবের নাম অনুসারে সেই বাজারের নাম হয় জিংকরগাছা বাজার। অতীতে বাজারকে গঞ্জ বলা হতো। গঞ্জ থেকে গাছার উৎপত্তি হয়েছে। ক্রম বিবর্তনে  হয় ঝিকরগাছা বাজার। পরবর্তীতে থানার নাম হয় ঝিকরগাছা।

যশোর জেলার সাবেক কালেক্টর জেমস ওয়েস্ট ল্যান্ড এর ‘A Report on the district of Jessore’ থেকে জানা যায় Jenkings নামক একজন ইংরেজ নীলকর গদখালীতে ১৮০০ সালে একটি নীলকুঠি স্থাপন করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবে এখানে ধারনা করা যায় Jhinkar (জিংকর) না হয়ে Jenkings (জেনকিনস) থেকেও ঝিকরগাছা নামের উৎপত্তি হতে পারে।

 

ঝিকরগাছার প্রাচীন জনপদ গদখালী। জেনকিনস সাহেব এখানে নীল কুঠি স্থাপন করার পর আর এক ইংরেজ ম্যাকানজি সাহেব নীল কুঠির সাথে অন্যান্য কলকারখানা স্থাপন করে গদখালীর উন্নয়ন সাধন করেন। এই জন্যে ম্যাকানজি সাহেবকে ঝিকরগাছার রুপকার বলা হয়। ঝিকরগাছার অপর নাম ম্যাকানজিগঞ্জ। ১৮৬৩ সালে কপোতাক্ষ নদের পশ্চিম পাড় যশোর জেলার অন্তর্ভূক্ত হয় এবং গদখালীকে যশোরের একটি থানা করার প্রয়োজন হয়। গদখালীতে পানীয় জলের অভাবের কারণে যশোরের দিকে ২ মাইল পিছিয়ে বেনেয়ালীতে গদখালীর নামেই গদখালী থানা স্থাপন করা হয়। বেনেয়ালীতে ছিল গভীর বন চোর ডাকাতদের অভয়াশ্রম। ম্যাজিষ্ট্রেট বিনফোর্ট এর নেতৃত্বে এ অভয়াশ্রম ধ্বংশ করা হয়। পরবর্তীতে সুবিধামত কোন এক সময়ে যশোর কোলকাতা সড়কের কপোতাক্ষ নদের উভয় পাশে বাজার গড়ে উঠায় থানা বেনেয়ালী থেকে বর্তমান স্থানে চলে আসে অর্থাৎ ঝিকরগাছায়।

 

উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন জাগে ১৮০০ সালের আগেও এখানে জনপদ ছিল। জনপদের পরিচিতির জন্য একটা নাম থাকা বিশেষ প্রয়োজন। তখন বর্তমান ঝিকরগাছার নাম কি ছিল? এ প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না। তবে একটা ধারণা করা যায় - প্রাচীন জনপদ বারবাজার থেকে ঝিকরগাছার দূরত্ব বেশি নয়। খানজাহান আলী বারবাজার এসে আস্তানা গেঁড়ে ছিলেন। তাঁর প্রভাব চতুর পাশে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাগের হাটে তাঁর সমাধির এপিটাপ থেকে জানা যায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ২৪ অক্টোবর ১৪৫৯ সাল। তিনি ১০০ বছর জীবিত থাকলে জন্ম হয় ১৩৬০ সালের দিকে। ১৩৬০ থেকে ১৪৫৯ সালের মাঝামাঝি অথবা তার কিছু আগে পরে তিনি বারবাজার এসেছিলেন। বারবাজার থেকে তিনি বাগের হাট যান। মুড়লী থেকে হযরত খান জাহান আলীর অনুচরবর্গ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল কপোতাক্ষ নদ ধরে সুন্দর বনের ভেদকাশী পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করেন। এ দলের নেতৃত্ব দেন বোরহান খাঁ বা বুড়ো খাঁ। এ তথ্য থেকে পরিস্কার বুঝা যায় বৃটিশ শাসনের অনেক আগে কপোতাক্ষ তীর অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রভাব ছিল। মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা আরবি। ক্রমাগত আল্লাহর নাম স্বরণ করাকে আরবিতে জিকির করা বলে। এবং আরবি গুছা শব্দের বাংলা অর্থ আস্তানা বা খানকাহ এখন দেখা যায়। গবেষক রফিকুল ইসলাম মনে করেন ইসলাম ধর্মের প্রভাবে জিকির গুছা থেকে বর্তমান ঝিকরগাছা নামকরণ হতে পারে। বিশিষ্ট গবেষক, সাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন - ঝিকরগাছার পূর্ব নাম ছিল জ্যান্টিনগর। কিভাবে এ নামের উৎপত্তি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

কথা সাহিত্যিক ইঞ্জিনিয়ার শামছুজ্জামান ঝিকরগাছা নামকরণে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, পাশ্ববর্তী চৌগাছা উপজেলা বড় চারটি গাছ এক জায়গায় ছিল এ থেকে চৌ (চার) এবং গাছা (গাছ) থেকে চৌগাছা নাম করণ হয়েছে। ঝিকরগাছাও গাছের নাম থেকে এসেছে। বাংলা অভিধানে ঝিকড়া শব্দের অর্থ তৃণজাতীয় ছোট গাছ। এই ঝিকড়া জাতীয় গাছের প্রাচুর্যের কারণে ঝিকড়া থেকে ঝিকরগাছা নামের উৎপত্তি হতে পারে। উপরোক্ত যে কোন সূত্র ধরেই ঝিকরগাছার নাম করণ হয়েছে।